সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন
সুজাউদ্দিন রুবেল : অগ্নিকাণ্ডের পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের স্থানান্তর করা রোগীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চিকিৎসা জন্য ফিরছেন আড়াই’শ শয্যার সরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ রোগীরা ফিরে আসায় সেবা দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। আর অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
আড়াই’শ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। যেখানে সবসময় থাকে রোগীর বাড়তি চাপ। কিন্তু গতকাল বুধবার অগ্নিকান্ডের পর অনেক রোগী চলে যান বেসরকারি হাসপাতালে।
এরপর বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। চালু হয়েছে হাসপাতালের প্রতিটি ইউনিট। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে ফিরতে শুরু করেছে রোগীরা। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও।
পঞ্চম তলায় চিকিৎসাধীন সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী হাফিজ বলেন, বুধবার অগ্নিকাণ্ডের পর হাসপাতাল থেকে বের হয়ে নিচে অবস্থান করছিলাম। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর রাতে পুনরায় হাসপাতলে ঢুকে পড়ি। এখন চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন, মোটামুটি সুস্থ আছে।
শিশু ওয়ার্ডে এক রোগীর অভিভাবক বলেন, আগুনের পর অন্য হাসপাতালে চলে গিয়েছিলাম। পরে হাসপাতালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার বৃহস্পতিবার সকালে আবারো সদর হাসপাতালে চলে আসি। এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসক এসে রোগীকে দেখেনি, বাচ্চা খুবই কান্নাকাটি করছে।
আরেক রোগীর স্বজন বলেন, আগুন লাগার পর রোগীকে নিয়ে একটি নিরাপদ স্থানে চলে যায়। পরে রাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু সকালে পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে রোগীকে। এখন হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে রোগীর চিকিৎসা চলছে।
এদিকে অগ্নিকান্ডের পর হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। হঠাৎ এক সাথে রোগী সামাল দিতে একটু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন চিকিৎসকরা।
সদর হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ইমরানুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে অনেক রোগী হাসপাতালে ফিরতে শুরু করেছে। বিশেষ কওে, অগ্নিকাণ্ডের পর যেসব রোগী ভয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চলে গিয়েছিল, তারাই হাসপাতালে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় অর্ধেকের বেশি রোগী হাসপাতালে এসেছেন বাকি যেসব রোগী বাইরে রয়েছেন তারাও সন্ধ্যার মধ্যে হাসপাতালে ফিরতে পারে বলে আশা করছি।
ইমরানুল ইসলাম আরও বলেন, অবশ্যই আমাদেরকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, কারণ একসাথে অনেক রোগী বাইরে চলে গিয়েছিল তারা এখন ফেরাতে চিকিৎসা দিতে একটু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তারপরও আমরা সঠিকভাবে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টায় আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্যে।
আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে; পুরোদমে হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। আর অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিক-উস্-ছালেহিন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেও কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত ছিল। নার্স, ডাক্তার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জরুরী বিভাগে গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। হাসপাতালে পুরোদমে চিকিৎসা সেবা চলছে। সকল ইউনিট খুলে দেওয়া হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।
রফিক-উস্-ছালেহিন আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধান করে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ করে হাসপাতালের নিচতলার পরিত্যক্ত স্টোর রুমে আগুন লাগে। এরপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অর্ধশত রোগী আহত হন। তারপর দ্রুত আইসিইউ এবং জরুরি সেবা নিতে আসা ৬০০ রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করে কর্তৃপক্ষ।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply